লাল আটা নাকি সাদা আটা?
লাল কিংবা সাদা; দুটোই গম পিষে তৈরি করা হয়। খোসা সমেত পিষে যেটা তৈরি হয় তা লাল আটা আর খোসা ছাড়ানো রিফাইন করে প্রস্তুত আটা হচ্ছে সাদা আটা। লাল আটার রুটির চেয়ে আমরা ইদানিং রিফাইন করা সাদা আটার রুটি খেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কিন্তু বেশ কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে যে রিফাইন করা সাদা আটা বিভিন্ন ধাপে আমাদের খাওয়ার উপযুক্ত হয় বলে এর স্বাস্থ্যকর গুণ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। অপরপক্ষে লাল আটার রুটিতে ভিটামিন এবং মিনারেলের মাত্রা সঠিক পরিমাণে থাকে বলে তা আমাদের জন্য বেশ স্বাস্থ্যকর। আসুন, লাল আটার স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জানি।
লাল আটার খাদ্য উপাদান :
সাধারণত পুষ্টিকর খাবারে ৫ ধরনের উপাদান থাকে। শক্তি উৎপাদক শর্করা, প্রোটিন, প্রয়োজনীয় ফ্যাট, ভিটামিন এবং মিনারেল। যেকোনো ধরনের শস্যদানাতে এই উপাদানগুলো থাকে যেগুলো আমাদের দেহে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ শক্তি জুগিয়ে থাকে এবং কাজ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন ফলমূল এবং শাকসবজিতেও প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেল থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারি। সব ধরনের গমের আটা এবং সাদা ময়দাতেও, সাদা ভাত বা বাদামি ভাতেও প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ থাকে।
গমের তৈরি লাল আটা স্বাস্থ্যসম্মত ও খুবই পুষ্টিকর। কেননা গমের বাইরের লাল বা বাদামি আবরণে অনেক পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। এই আবরণ ম্যাগনেশিয়াম নামক খাদ্য উপাদানে ভরপুর। কিন্তু খেতে সুস্বাদু হলেও রিফাইন বা পরিশোধিত সাদা আটার পুষ্টিগুণ অনেক কম। অত্যধিক পরিশোধনের ফলে দেহের জন্য উপকারী কিছু ভিটামিন ও মিনারেল নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া ময়দায় আঁশের পরিমাণ কম, এর গ্লাইসেমিক সূচকও বেশি।
সাদা আটার কি তুলনায় লাল আটার পুষ্টিগুণ বেশি:
গমের বাইরের লাল বা বাদামি আবরণে অনেক পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। এই আবরণ ম্যাগনেশিয়াম নামক খাদ্য উপাদানে ভরপুর। এটি এক ধরনের খনিজ উপাদান, যা আমাদের দেহের প্রায় ৩০০ রকমের এনজাইমের কাজ পরিচালনা করে। সাদা আটার তুলনায় লাল আটায় প্রোটিন বেশি থাকে, ফ্যাট কম থাকে, কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে, আঁশের পরিমাণ বেশি থাকে, ক্যালরি কম থাকে। এ ছাড়া লাল আটা- ফলিক এসিড, ফসফরাস, জিংক, কপার, ভিটামিন বি১, বি২ এবং বি৩-এর ভালো উৎস।
পুষ্টি পার্থক্য:
সাদা ও লাল আটার মধ্যে পুষ্টি পার্থক্য হলো:
৩৮ গ্রাম সাদা আটার পুষ্টিগুণ:
১. ক্যালোরি: ৮৭ কিলোক্যালরি
২. ফ্যাট: ৭ গ্রাম।
৩. কার্বোহাইড্রেট: ৬.০ গ্রাম
৪. খাদ্য আশঁ ১.৫ গ্রাম
৫. প্রোটিন ৩.৪ গ্রাম।
৩৮ গ্রাম লাল আটার পুষ্টিগুণ:
১. ক্যালোরি: ২৮ কিলোক্যালরি
২. ফ্যাট: ২.৫ গ্রাম।
৩. কার্বোহাইড্রেট: ৯.১ গ্রাম।
৪. খাদ্য আশঁ: ২.৮ গ্রাম।
৫. প্রোটিন ৫.৫ গ্রাম।
সুতরাং দেখা যায় সাদা আটার রুটি থেকে লাল আটার রুটির মধ্যে পুষ্টিগুন অনেক বেশি।
লাল আটার উপকারিতা:
১. লাল আটার অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
২. ডায়াবেটিস রোগী ও স্থুল রোগীর রক্তে চিনি ও শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. লাল আটা আঁশ রক্তে ক্ষতিকারক ফ্যাট কমায় ও উপকারি ফ্যাট বাড়ায়।
৪. লাল আটা ক্ষুধা প্রশমিত করে ও অতিরিক্ত ওজন কমায়।
৫. লাল আটায় রয়েছে থায়ামিন যা স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা রক্ষা করে। (হাত ও পায়ের নার্ভ সচল রাখে)।
৬. পরির্পূণ পুষ্টি সমৃদ্ধ আঁশযুক্ত গমের আটা সুস্বাস্থের জন্য অপরির্হায।
৭. লাল আটায় লিগনান নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৮. লাল আটা হৃদযন্ত্রের জন্যও উপকারি।
৯. লাল আটা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
১০. লাল আটায় প্রচুর ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
কোনটা খাবো – সাদা আটা না কি লাল আটা ?
আটা শর্করা জাতীয় খাবার। আটা ও ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার যেমন: বিস্কুট, ব্রেড, প্যাটিস, শিঙাড়া, সমুচা ইত্যাদি মুখরোচক খাবার। এখন এসব খাবার তৈরিতে সাদা রঙের রিফাইন্ড বা পরিশোধিত আটা ব্যবহার হয়। লাল আটা আনরিফাইন্ড বা অপরিশোধিত। খেতে সুস্বাদু হলেও পরিশোধিত সাদা আটার পুষ্টিগুণ অনেক কম।
গম থেকে আটা উৎপাদনের এবং পরিশোধন প্রক্রিয়ায় প্রায় ১৪ রকমের ভিটামিন, ১০ ধরনের খনিজ এবং এতে বিদ্যমান আমিষ নষ্ট হয়ে যায়। সাদা আটায় খাদ্য আঁশের পরিমাণ কম থাকে। তবে ভূসিসমেত লাল আটায় অনেক আঁশ থাকে।
তাই লাল আটার রুটি খাওয়ার পর রক্তের গ্লুকোজ ধীরে ধীরে বাড়ে। তাই হৃদরোগ প্রতিরোধে, ওজন কমাতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লাল আটার জুড়ি নেই। সকালের নাশতায় যাঁরা রুটি পছন্দ করেন, তাঁরা সাদা আটার পরিবর্তে ভূসিসমেত লাল আটার অভ্যাস করুন।
Reviews
There are no reviews yet.